Saturday, March 3, 2018

সংস্কৃতে পুশকিন

ব‌হুদিনের অনভ্যাসের পর মাস ছয়েক হল রুশ ভাষার ব‌ইপত্রগুলো তাক থেকে নামিয়ে ধুলো-টুলো ঝেড়ে একটু-আধটু নাড়াচাড়া করতে শুরু করেছি। সপ্তাহে একদিন সন্ধ্যেয় ঘণ্টা দেড়েকের একটা ক্লাসেও যাচ্ছি। ক্লাসটি বেশ মজার। আছি আমরা মোটে পাঁচ-ছ' জন। আমি ছাড়া প্রায় সবাই অবসরপ্রাপ্ত - এক ভদ্রমহিলার তো বয়স আশির ওপর। এঁরা মোটামুটি সবাই স্কুল-কলেজে পড়াকালীন রুশ ভাষা শিখেছিলেন; কিন্তু তারপর ঘর-সংসার, ছেলে-মেয়ে মানুষ করা, চাকরি-বাকরির ধাক্কায় তার সংগে সম্পর্ক আসতে আসতে ক্ষীণ হয়ে গেছে। কিন্তু অবসরজীবনে পৌঁছে সেই পুরনো সম্পর্কের বাঁধনটাকে আর একবার ফিরে দেখার ইচ্ছায় প্রৌঢ় বয়েসে আবার ফিরে এসেছেন ক্লাসরুমে। আমাদের কোর্সের একটা ব‌ই আছে বটে, কিন্তু সেটা শেষ করার তাড়া কার‌ও নেই। আমরা ক্লাসে যাই, যতটা পারি রুশ ভাষায় কথা-বার্তা বলি, গান গাইতে শিখি, কবিতা মুখস্থ করি। তো সেই সুবাদেই, আমার পুশকিনের কবিতার সংগে পরিচয় হল। আমাদের যেমন রবীন্দ্রনাথ, রুশ সাহিত্যে তেমন‌ই মহাকবি পুশকিন। তাঁর‌ই একটা ছোট্ট কবিতা আমরা ক্লাসে পড়লাম - বিরহের কবিতা। আমার খুব ইচ্ছে হল অনুবাদ করি, কিন্তু কবিত্ব তো পেটে বোমা মারলেও বেরোবে না। এখন উপায়? ভেবে দেখলাম, মুশকিল আসান করে দিয়ে গেছেন আমাদের আদিকবি বাল্মীকি শ্লোক ফেঁদে। কাজেই, অনুবাদটা সংস্কৃত শ্লোকেই নামানো হল। মনের তৃপ্তিও হল, আর বেশি কেউ যে ওঁচা কবি বলে গাল দেবে সে সম্ভাবনাও কমল। সংস্কৃত যে বেশি লোকে পড়ে না, তার একটা সুফল‌ই বলতে হবে।

বেশ কিছু ভিন্ন ভিন্ন স্বাদের ইংরেজি অনুবাদ-স‌হ (আধুনিক বানানে) মূল রুশ কবিতাটি এইখানে পড়ে নেওয়া যাবে। আর এই হল আমার শ্লোক বাঁধার সেই হঠকারী প্রচেষ্টাঃ

"অনুরাগ্যহমস্মি স্ম..."

অনুরাগ্যহমস্মি স্ম। রাগো জাত্বধুনাঽপ্য‌য়ম্‌
ন দ্রাক্‌ প্রশমিতঃ সম্যগন্তর্জাতঃ প্রিয়ে ধ্রুবঃ॥
ন ত্বেষ জনয়েৎ ক্লেশং হৃদয়ে তে বিরাগজম্‌।
ন খেদয়িতুমিচ্ছামি সত্যেন ত্বাং কদাচন॥
অনুরাগ্যহমস্মি স্ম নিরাশঃ সতি রুদ্ধবাক্‌।
হ্রিয়া কিঞ্চিদখিদ্যেঽহং কিঞ্চিচ্চ পুনরীর্ষ্য‌য়া॥
অনুরাগ্যহমস্মি স্ম মৃদুলাচার আকুলঃ।
দৈবং দেয়াত্তথা হ্যন্যং দয়িতং তেঽনুরাগিণম্‌॥

Monday, June 22, 2009

আমাত্‍‌ থেকে, তোমাচ্‌ চেয়ে

লোকে বলে সমসকৃতো নাকি খুব শক্ত, কারণ সন্ধির মারপ্যাঁচে নাকি আস্ত আস্ত বাক্যকে মুনি-ঋষিরা একেকটা শব্দে নামিয়ে আনতেন। তবে আমি বলি কি, আমরা বাঙালিরাও খুব কম যাই না। ফুটপাথে ওই যে হকারটা আপনাকে প্রতিদিন অফিস-ফেরতা "কুড়ি টাকায় দু' জোড়া মোজা নিয়ে যান" বলে বিরক্ত করে তাকে আপনি কী বলে উত্তর দেন? "আমার দরকার নেই" ... তাই না? একটু ভেবে বলুন তো, ঠিক তাই কি বলেন? নাকি বলেন "আমাদ্দরকান্নেই"?

এই হচ্ছে সন্ধি। বাংলায় নানারকম সন্ধি হয়; তবে র্‌-এর উপর দিয়ে সন্ধির ঝাপটাটা যতখানি যায়, ততখানি বোধ করি আর কোনও ধ্বনির উপর দিয়ে যায় না, বিশেষ করে সেই র্‌ বেচারা যদি শব্দের শেষে আসে। শব্দের শেষের র্‌ সত্যিকারের র্‌-এর মত উচ্চারিত হয়, যদি তা বাক্যেরও শেষ হয়, অথবা পরের শব্দ স্বরধ্বনি দিয়ে শুরু হয়, তবেই। নচেত্‍‌, শব্দের শেষের র্‌-এর পরে একই বাক্যের পরবর্তী শব্দ যদি ক-বর্গ, প-বর্গ এবং হ ভিন্ন অন্য যেকোনও ব্যঞ্জনধ্বনি দিয়ে শুরু হয়, তবে আমাদের র-বাবুও তার নিজের স্বরূপ বদলে সেই ধ্বনির ভেক ধরে - ধ্বনিতত্ত্বের ভাষায় একে বলে "সমীভবন"। অবশ্য সেই ধ্বনি যদি মহাপ্রাণ হয় তবে, ভেকটা ঠিক পুরোপুরি ধরতে পারে না, কারণ বাংলায় পর পর দু'টি মহাপ্রাণ ধ্বনির উচ্চারণ বে-আইনি। সে-ক্ষেত্রে বেচারাকে সংশ্লিষ্ট লঘুপ্রাণ ধ্বনির বেশেই সন্তুষ্ট থাকতে হয়। সেই জন্যেই আমরা "আমার থেকে"-তে র-এর জায়গায় "ত্‍‌" (থ্‌-এর সংশ্লিষ্ট লঘুপ্রাণ ধ্বনি) উচ্চারণ করি, এবং "তোমার চেয়ে"-তে "চ্‌" উচ্চারণ করি। স্বভাবতঃ-ই পরের প্রশ্ন যেটা ওঠে সেটা হচ্ছে, র্‌-এর পরের ধ্বনি ক-বর্গ, প-বর্গ, বা হ হলে কী হয়। তখনও কিন্তু র্‌ নিজের স্বরূপ বজায় রাখতে পারে না; তবে সমীভবনও হয় না। তখন র্‌-এর উচ্চারণ অনেকখানি আলতো ভাবে হয়, এবং অনেক ক্ষেত্রেই (যেমন:- তাড়াহুড়ো করে কথা বলার সময়) একে বারেই লোপ পেয়ে যায়, তবে লোপ পেয়ে গেলে আগের স্বরধ্বনিটির উচ্চারণ দীর্ঘায়িত হয়। তাড়াহুড়োতে আমরা তাই প্রায়ই "আমার মনে হয়"-কে অনেকটা "আমাআ মনে হয়"-এর মতো উচ্চারণ করে থাকি। "আলতো ভাবে উচ্চারিত হয়" কথাটার অবশ্য ধ্বনিতত্ত্বে বিশেষ কোনও মানে হয় না। তাই, আরও নিখুঁতভাবে বলতে গেলে বলতে হয় যে, খাঁটি র্‌-এর উচ্চারণ হচ্ছে দন্তমূলীয় কম্পিত ধ্বনির (IPA: [r])। আলতো উচ্চারণের ক্ষেত্রে এই কম্পনের মাত্রাটা অনেকখানি কমে যায়। ঠিক কতখানি কমে সেটা আমি এই মুহূর্তে বলতে পারব না, তবে ধ্বনিতাত্ত্বিকরা যন্ত্র-পাতি দিয়ে সেটা সহজেই মেপে ফেলতে পারবেন ... এবং এতদিনে নিশ্চয়ই ফেলেছেনও, তবে তার ফলাফলটা আমার জানা নেই।

যদিও আমি মূলতঃ শব্দান্তস্থিত র্‌-এর কথা বলছি এতক্ষণ ধরে, এই সন্ধির নিয়মগুলো কিন্তু অনেক সময়ই শব্দের মাঝখানেও প্রযুক্ত হয়। যেমন ধরুন, "করছি"-র জায়গাতে আমরা অনেক সময়ই "কচ্ছি" বলে থাকি, তাই না? এবং সেই জন্যই, কেউ "খেতে পাচ্ছে না" বললে, অনেক সময় আমাদের সন্দেহ হয় ব্যক্তিটি অত্যন্ত গরিব হওয়ায় খাবার যোগাড় করতে পারছে না, নাকি দাঁতে ব্যথা বলে "খেতে পারছে না"!

Sunday, June 21, 2009

স্বাগতসম্ভাষণ ও ভূমিকা

নমস্কার বন্ধুগণ, এই আমার প্রথম ব্লগ। প্রথমেই কৃতজ্ঞতাস্বীকার। এই ব্লগের অনুপ্রেরণা ঢাকার সাংবাদিক আককাস-দা'র ব্লগ "বাংলা ভাষা"। জানি না, ওনার মতো আমি আদৌ নিয়মিত লিখতে পারব কিনা, অথবা কোনও বিশেষ একটা বিষয় বা ধারা ধরেই বা লিখতে পারব কিনা। মোটের উপর, বিরক্তিকর লেকচার ক্লাসে শে‌ষ বেঞ্চে বসে খাতার শেষ পাতায় আঁকিবুঁকি কাটতে কাটতে লোকে সচরাচর যেরকম আবোল-তাবোল নানা কথা ভেবে থাকে, এই ব্লগের বিষয়বস্তুচয়নের জন্য আমার এই মুহূর্তে তার থেকে বেশী মাথা ঘামানোর বিশেষ কোনও পরিকল্পনা নেই। এবং সেই সূত্রেই ব্লগের নাম "শেষ পাতা"। তবে আজকাল আমার যা মতি-গতি দেখছি, তাতে ভাষা এবং ভ্রমণ - এই দুটি বিষয়ই যে আপাততঃ প্রাধান্য পাবে, সে-বিষয়ে আমার খুব একটা সন্দেহ নেই।

অতঃপর, সবাইকে আমার "শেষ পাতা"-য় জানাই স্বাগত।


---


পুনশ্চ: ব্লগের ভাষা বাংলা, তবে কিছু কিছু পোস্টে হয়তো একটা ছোট-খাট ইংরেজি সারাংশও থাকবে, বিশেষ করে যদি দেখি আমার বাংলা-না-জানা বন্ধু-বান্ধবরাও সেই পোস্টের ব্যাপারে আগ্রহী হতে পারে।